কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল সরকারি স্বাস্থ্যসেবার প্রধান কেন্দ্র হলেও সেখানে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের অমানবিক আচরণে রোগীরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। জরুরি সেবা, ইনডোর সেবা ও আউটডোর সেবায় একের পর এক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
আউটডোর সেবায় ভোগান্তি :
মফঃস্বল থেকে আসা এক রোগী গলা ব্যথার জন্য টিকেট কেটে নাক, কান ও গলার (ইএনটি) চিকিৎসক ডা. শান্তনু সিং-এর চেম্বারের সামনে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর জানতে পারেন, তিনি হাসপাতালে এসেও কোনো রোগী না দেখে চলে গেছেন। অসংখ্য রোগী ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চিকিৎসা পাননি। সহকারী পরিচালক ডা. সাইফুল্লাহ রোগীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও ডাক্তার অনুপস্থিত থাকায় তিনি অসহায় হয়ে পড়েন।
অভিযোগ উঠেছে, ডা. শান্তনু সিং প্রায়ই নির্ধারিত সময়ে হাসপাতালে থাকেন না, তবুও তার বিষয়ে হাসপাতাল প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ইনডোর সেবায় দুর্নীতি ও হয়রানি :
সম্প্রতি এক স্ট্রোক রোগীকে ভর্তি করাতে গিয়ে শুরু হয় স্বজনদের হয়রানি। হুইলচেয়ার নিয়ে চারতলা মহিলা ওয়ার্ডে তুলতে গিয়ে ওয়ার্ড কর্মী ১০০ টাকা দাবি করেন। পরে সিট খালি থাকা সত্ত্বেও রোগীকে সিট দিতে গড়িমসি করা হয়।
অভিযোগ, হাসপাতালের নার্স, ইন্টার্ন ডাক্তার ও ওয়ার্ডবয়দের একটি সিন্ডিকেট আগেই ফোনে সিট “বুকিং” দিয়ে রাখে এবং অর্থ না দিলে রোগীদের মেঝেতে থাকতে বাধ্য করে।
পরীক্ষায় অনিয়ম :
সরকারি হাসপাতালে কম খরচে পরীক্ষার সুযোগ থাকলেও রোগীদের বাহিরে পরীক্ষায় পাঠানো হয়। CBC পরীক্ষা সরকারি ফি ১০০ টাকা হলেও রোগীদের প্রাইভেট ল্যাবে ৪০০ টাকা দিয়ে করাতে বাধ্য করা হয়। এমনকি সিটি স্ক্যানের ক্ষেত্রেও সরকারি নির্ধারিত খরচের চেয়ে বেসরকারি হাসপাতালে সামান্য পার্থক্যে পরীক্ষা করাতে হয়। রোগীরা বলছেন, এর পেছনে সিন্ডিকেটভিত্তিক বাণিজ্য চলছে।
দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বনাম মানবিকতার উদাহরণ :
একদিকে কিছু চিকিৎসকের দায়িত্বহীনতা ও রূঢ় আচরণে রোগীরা হতাশ হচ্ছেন, অন্যদিকে কিছু মানবিক চিকিৎসক এখনো রোগীদের ভরসা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। সহকারী পরিচালক ডা. সাইফুল্লাহ ও আরএমও ডা. সাবুক তাজিন মাহমুদ সোহেল অসহায় রোগীদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। আবার মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কফিল উদ্দিন মানবিক ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক রোগীকে সুস্থ করেছেন।
রোগীরা জানতে চান—সরকারি বেতনভুক্ত চিকিৎসক যদি দায়িত্ব পালন না করেন, তবে তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না? কেন হাসপাতাল প্রশাসন নীরব থাকে? সরকারি হাসপাতালের এই অনিয়ম-দুর্নীতির বোঝা শেষ পর্যন্ত গরিব রোগীদের ঘাড়েই চাপছে।