বাংলাদেশে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক দিন ৩৬ জুলাই নাশকতা করতে টেকনাফের সেন্টমার্টিন যুবলীগ সভাপতি আক্তার কামালের নেতৃত্বে গোপন বৈঠক হয়েছে বলে অভিযুক্ত পাওয়া গেছে।
রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে এনআইডি কার্ড বানানো ও মায়ানমারে চোরাকারবারির দায়ে যুবলীগ নেতা আক্তার কামালকে ১৭ জুন কারাগারে পাঠান কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
কয়েকদিন আগে কারামুক্ত হয়ে তিনি আবারও অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। সরকার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র, তৎপরতা শুরু করেন।
তবে অভিযুক্ত আক্তার কামালের বক্তব্য জানতে একাধিকবার কল দিলেও মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
গত ১লা মে দেশের জাতীয় পত্রিকা সমকাল ও বাংলা ট্রিবিউট পত্রিকাসহ কক্সবাজারের স্থানীয় একাদিক প্রতিকায় প্রকাশিত সংবাদে “টেকনাফে ইউএনও’র অনুমতিপত্র জালিয়াতি করে মায়ানমারে মালামাল পাচারের প্রধান হুতা হিসেবে উঠে আসে চিহ্নিত এই আক্তার কামালের নাম।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা চট্টগ্রামে পড়ুয়া শিক্ষার্থী তৌহিদ বলেন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে দ্বীপ থেকে যেসকল শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছিলো, যুবলীগ নেতা আক্তার কামাল তাদের নাম তালিকা করে সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়ীতে দিয়ে অভিভাবকদের হয়রানির করিয়েছিলো। দ্বীপ থেকে গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমাদের বাবা-ভাইদের আটক করে পুলিশ ফাঁড়িতে এনে হেনস্তা করেছিলো।
কলেজ পড়ুয়া তোফায়েল বলেন, সেন্টমার্টিন স্কুলে আমি আক্তার কামাল স্যারের স্টুডেন্ট ছিলাম। স্যার মাত্র ৪ হাজার টাকা বেতনে স্কুলের প্যারা শিক্ষক থেকে গত ১৫ বছরে লীগের প্রভাব কাটিয়ে অবৈধভাবে ইনকাম করে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যান আক্তার কামাল স্যার।
দ্বীপের আরেক বাসিন্দা হারুন রশীদ বলেন, সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আক্তার কামালের নির্দেশে সেন্টমার্টিন বিএনপির প্রবীণ মুরব্বি মাওলানা আব্দুর রহিম হুজুরকে ১৬ জুন ২০২৪ ইং সন্ধ্যায় থানায় নিয়ে গিয়ে ৭/৮ ঘন্টা আটক করে রেখেছিলো। তার এক ছেলে ঢাকায় গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করার কারণে। তারপর থেকে মাওলানা আব্দুর রহিম ধীরে ধীরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে অসুস্থ হয়ে যান। দীর্ঘদিন কক্সবাজার হাসপাতালে চিকিৎসারত ছিলেন। একপর্যায়ে ৩১শে আগষ্ট ২০২৪ ইং ইন্তেকাল করেন। প্রশাসনের উচিৎ চোরাকারবারি আক্তার কামালকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা।
গত ২৩ জুন তারিখ রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি মামলায় জামিন হলেও জিআর মামলা নং- ২৯৯/২৫ মায়ানমারে চোরাচালান কারবারি হিসেবে প্রধান হুতা আক্তার কামালকে আটক দেখিয়ে পুনরায় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
আক্তার কামালকে ১৪ জুলাই রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। তার বিরুদ্ধে মায়ানমারে চোরাকারবারি, জমি দখল, চাঁদাবাজি, মানবপাচার, মাদক কারবারিসহ অসংখ্য অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৩০ জুলাই জেল থেকে ছাড়া পায় আক্তার কামাল। কয়েকদিনের মাথায় ৫ আগষ্ট (৩৬ জুলাই) দেশে নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে গোপন বৈঠক করে।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, ১লা আগষ্ট কক্সবাজার শহরের সাহিত্যিকাপল্লী এলাকায় একটি বাসার কক্ষে কার্যক্রম নিষিদ্ধ যুবলীগের গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেসময় জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে নেতাকর্মীরা যান। গোপন বৈঠকে সেন্টমার্টিন যুবলীগ সভাপতি আক্তার কামাল ও কয়েকজন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতারাও উপস্থিত ছিলো বলে জানা যায়।
বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয়, শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার পর সারা দেশ থেকে লোকজন ঢাকায় সমবেত হবেন। তারা ঢাকার শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশে শেখ হাসিনাকে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবেন। বৈঠকে নেতারা বলেন, জেলা- উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ঝটিকা মিছিল ও টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা ব্লকেড করতে হবে।
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। সেই সাথে ৩৬শে জুলাই স্বৈরাচার মুক্ত নতুন বাংলাদেশ হয়। ২৪শের স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশ ৩৬শে জুলাই বর্ষপুতি উদযাপন করবে সরকার।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ঘোষিত শোকের আগষ্ট পালন করতে সোশাল মিডিয়ায় বঙ্গবন্ধু ছবি পোষ্ট করাসহ পুরো মাসজুড়ে আগষ্ট পালন করতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সকল অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা দেশে নাশকতা তৈরি করতে ভিবিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
দেশে ষড়যন্ত্রে নেমেছে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার ধূসররা। নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের দোসররা যেন দেশে নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পরে সেজন্য দেশের সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ডেভিল হান্ট পরিচালনাসহ সজাগ থাকতে নির্দেশ দেন সরকার।
এ বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের নিকট জানতে চাইলে বলেন, যে কোনো ধরণের নাশকতা ও অপতৎপরতা রোধে পুলিশের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। সেন্টমার্টিনে গোপন বৈঠকের অভিযোগে বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে।