হাজীগঞ্জে উপজেলা আ. লীগের উপদেষ্টা সদস্য লোকমান হোসেন দুলাল পাটওয়ারী ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে ক্ষমতার দাপটে নামমাত্র মূল্যে মানুষের কৃষিজমি ক্রয় করে নিয়েছেন। ওই জমিতে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে মাটি উত্তোলন শুরু করেন।
যা সরকার পতনের এক বছর পার হলেও বন্ধ হয়নি তার মাটি উত্তোলন। প্রজেক্ট স্থাপনের নাম দিয়ে তিনি গত তিন বছর থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে মাটি উত্তোলন করে যাচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন জমি বিনষ্ট হচ্ছে, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য পড়েছে হুমকির মুখে।
অপর দিকে কৃষি মাঠের আশপাশের জমি ভেঙে পড়াসহ বোরো মৌসুমে বেশ কয়েক একর জমি অনাবাদি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি উপজেলার বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের সোনাইমুড়ী-দেবিপুর মাঠে এমন চিত্র দেখা গেছে। স্থানীয়রা জানান, মাঠের পাশেই সোনাইমুড়ী গ্রামের সূত্রধর বাড়ি সংলগ্ন সোনাইমুড়ী-দেবিপুর মাঠের পাশে লোকমান হোসেন দুলাল পাটওয়ারী প্রজেক্ট স্থাপনের নাম করে তার মালিকানাধীন সম্পত্তিতে উঁচু দেয়াল নির্মাণ করেন। সেখানে কৃষিজমিসহ একাধিক পুকুর রয়েছে।
এছাড়াও তারা জানান, মাটি নেওয়ার জন্য যতটুকু পাইপ বসানো হয়েছে, ততটুকু পাইপের জোড়ার অংশ দিয়ে মাটি ও বালু পড়ে অনেকের কৃষিজমির চাষাবাদ বন্ধ হওয়ার পথে। যার ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই তার কাছে জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন তার টাকা আছে, তিনি মানুষের জমি কিনে নিচ্ছেন। কিন্তু আমাদের কি উপায় হবে ?
তিন বছর পূর্বে তিনি ফ্যাসিবাদী সরকার দলের দাপট খাটিয়ে মাঠের জমিতে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে মাটি উত্তোলন শুরু করেন এবং বিভিন্ন সময়ে ধাপে ধাপে তার প্রজেক্টের ভেতরে কৃষিজমি ও পুকুর ভরাট করেন। সরকার পরিবর্তনের পর কিছুদিন মাটি উত্তোলন বন্ধ থাকলেও কয়েক মাস পূর্বে তিনি আবারও মাটি উত্তোলন শুরু করেন।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে কিছুদিন পূর্বে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নির্দেশনায় ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মাটি উত্তোলনের সত্যতা পান এবং তাৎক্ষণিক মাটি উত্তোলন বন্ধের নির্দেশনা দেন। এরপর থেকে দিনের বেলায় বন্ধ থাকলেও রাতের আঁধারে মাটি উত্তোলন অব্যাহত রাখেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, তিনি ধনি মানুষ। আ.লীগের দাপট দেখিয়ে তার জমিতে ড্রেজার বসিয়ে মাটি উত্তোলন করে যাচ্ছেন। এতে আশপাশের গরিব মানুষের জমির ক্ষতি হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা দিলীপ সূত্রধর ও মালেক সরকার জানান, প্রশাসনের অভিযানের পর এখন দিনে মাটি উত্তোলন করে না, রাতে উঠায়। রাত ১০টার পর মেশিন চালু করে, ভোর ৫টায় মেশিন খুলে মাটি উত্তোলনের স্থান থেকে সরিয়ে রাখে।
ড্রেজারের মালিক মনির হোসেন বলেন, প্রশাসনের লোকজন এসে মাটি উত্তোলন করা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন আমি মেশিন খুলে ফেলেছি। কিছু পাইপ আছে, সেগুলো খুলে নিয়ে আসব। মাটি উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে লোকমান হোসেন দুলাল পাটওয়ারী বলেন, আমি আমার জমি থেকে মাটি উত্তোলন করছি। এতে কারো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আশপাশের সব জমি আমার। এখানে অন্য কারো জমি নেই।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাবেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে গত সপ্তাহে ড্রেজারটি বন্ধ করে দিয়েছি। এখন আবার অভিযোগ পেয়েছি, দিনে নয়, রাতে মাটি উত্তোলন করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় বলতে পারলে, আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।