ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেছেন, বর্তমানে প্রচুর ভুয়া তথ্য, ফেক ইমেজ (ভুয়া ছবি) এবং এআই–নির্ভর বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট ছড়িয়ে পড়ছে। নির্বাচনের সময় এগুলোর প্রভাব আরও বাড়বে। ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে সতর্ক করছেন।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আয়োজিত সংলাপ হয়। এসময় শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীরা সংলাপে অংশ নেন। সংলাপ শেষে এসব কথা বলেন গীতি আরা নাসরিন।
গীতি আরা নাসরিন বলেন, ভূয়া তথ্য ঠেকাতে আপনার একটি আইসিটি সেল গঠন করেছেন, সিরিয়াসলি কাজও করছেন। এক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ, বিশেষজ্ঞ ও রিসোর্স ব্যবহার করলে তারা নিশ্চয়ই সহায়তা করতে আগ্রহী হবেন। এতে ফেক নিউজ ও এআই–নির্মিত ভুয়া কনটেন্ট প্রতিরোধ করা সহজ হবে।
অধ্যাপক গীতি আরা আরও বলেন, আমরা জানি, সুষ্ঠু গণতন্ত্রের জন্য কার্যকর গণমাধ্যম অপরিহার্য। পুরো নির্বাচন ব্যবস্থায় গণমাধ্যম যেন সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারে—সংবাদ সংগ্রহ করতে পারে, যাতে কোনো ভ্রান্ত ধারণা তৈরি না হয়। শুরু থেকেই সবার কাছে সব তথ্য যেন পৌঁছায়। নির্বাচনের প্রস্তুতি থেকে শুরু করে ভোটগ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত সবক্ষেত্রেই গণমাধ্যমের সঠিক ভূমিকা জরুরি।
গীতি আরা নাসরিন বলেন, আমার মনে হয়, যদি সম্ভব হয় নির্বাচন কমিশন যেমন আমাদের সঙ্গে কথা বলছে, তেমনি গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলাপ করা দরকার। প্রতিনিধিত্বশীল গণমাধ্যম থেকে সম্পাদক, সিইও এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে যদি আলোচনা হয় এবং একটি গণমাধ্যম নীতিমালা প্রণয়ন করা যায়, তবে তা কার্যকর হবে। এতে করে গণমাধ্যমের কাজের ক্ষেত্রে স্পষ্টতা আসবে, নির্বাচনী কাঠামোতে স্বচ্ছতা থাকবে এবং সাধারণ মানুষও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাবে। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে।
ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই অধ্যাপক আরও বলেন, আমি আচরণবিধি প্রসঙ্গে কিছু বলতে চাই। রাজনৈতিক শিষ্টাচারের অভাব আমরা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করি। অনেক সময় এমন বক্তব্য প্রচারিত হয়, যা কোনোভাবেই রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহন করে না। আগে হয়তো এমন মন্তব্য হতো, কিন্তু এত ধরনের মিডিয়া না থাকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ত না। এখন সামাজিক মাধ্যমে এগুলো দ্রুত সময়ে মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। এই অবস্থার পরিবর্তনে আমাদের একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়তে হবে—যেখানে পারস্পরিক সম্মান বজায় থাকবে, ঘৃণাসূচক বা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য এড়ানো হবে। এই আচরণবিধি শুধু নির্বাচন কমিশনের একতরফা নির্দেশে তৈরি না হয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রণয়ন হওয়া উচিত। তবেই এটি গ্রহণযোগ্য হবে এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচার প্রতিষ্ঠা পাবে।