কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় তোলপাড় শুরু হয়েছে ওয়াশিংটনে। যদিও হামলায় সরাসরি জড়িত ছিল ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী, কিন্তু এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও এক বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে এই হামলার সমালোচনা করেছেন, যা এক বিরল ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সোমবার দুপুরে দোহায় বিস্ফোরণে একটি ভবন ধসে পড়ার খবর আসে। পরে জানা যায়, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো হামাসের নেতাদের লক্ষ্য করে এই হামলা চালিয়েছে। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মার্কিন সামরিক বাহিনী থেকেই ট্রাম্পকে হামলার বিষয়ে জানানো হয়, কিন্তু তখন আর কিছুই করার সময় ছিল না। ট্রাম্প পরে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লিখেছেন, “এটি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্ত, আমার নয়।” তিনি কাতারকে আমেরিকার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও শক্তিশালী মিত্র হিসেবে উল্লেখ করে বলেন যে, এ ধরনের পদক্ষেপ শান্তি প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তাদের আলোচক দল অল্পের জন্য বেঁচে গেছে। হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন কাতারের নাগরিকও রয়েছেন। হামাস দাবি করেছে, এই আক্রমণ প্রমাণ করে যে নেতানিয়াহু সরকার আসলে কোনো শান্তি চুক্তি চায় না। তারা ইসরায়েলের প্রতি অব্যাহত সমর্থনের কারণে মার্কিন প্রশাসনকেও দায়ী করেছে।
অন্যদিকে, কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজিদ আল আনসারী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বার্তা তখনই এসেছে যখন বিস্ফোরণের শব্দ কানে বাজছিল। তিনি এই হামলাকে সার্বভৌম রাষ্ট্রের ওপর আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
তেল আভিব থেকে নেতানিয়াহুর দপ্তর দ্রুত বিবৃতি পাঠিয়ে জানিয়েছে, “এটি সম্পূর্ণরূপে ইসরায়েলের সিদ্ধান্ত। হামলা ইসরায়েল চালিয়েছে এবং এর দায়ও ইসরায়েলের।” নেতানিয়াহু আরও বলেন, হামাসের নেতাদের জন্য কোথাও কোনো নিরাপদ আশ্রয় থাকবে না।
ট্রাম্প সাধারণত ইসরায়েলের প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করে থাকেন। কিন্তু এবারের ঘটনায় তার ভিন্ন সুর শোনা গেল। তিনি বলেন, “কাতারের মতো দেশ, যারা সাহসিকতার সঙ্গে আমাদের পাশে থেকে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা করছে, সেখানে একতরফা বোমাবর্ষণ ইসরায়েল বা আমেরিকার লক্ষ্যকে সামনে এগিয়ে দেয় না।” হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, ট্রাম্প কাতারের আমির ও প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে আশ্বস্ত করেছেন যে, এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না।
বিশ্লেষকরা এই ঘটনাকে ওয়াশিংটন-তেল আভিভ সম্পর্কের মধ্যে এক ধরনের ফাটল হিসেবে দেখছেন। কাতার দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক অংশীদার। মে মাসে ট্রাম্প ১.২ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক চুক্তির ঘোষণা দিয়েছিলেন, যেখানে কাতারের ভূমিকা ছিল মূল। দেশটি সম্প্রতি ট্রাম্পকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের একটি বিমানও উপহার দিয়েছে। ফলে দোহায় এই হামলা কেবল সামরিক বা কূটনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক সম্পর্কের দিক থেকেও আমেরিকার জন্য অস্বস্তি তৈরি করেছে।
হামলার পরেও ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছেন যে এই অপ্রীতিকর ঘটনা হয়তো শান্তির সুযোগ তৈরি করতে পারে। তিনি বলেছেন, নেতানিয়াহু তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে তিনি দ্রুতই একটি শান্তি চুক্তি চান। তবে বাস্তবে পরিস্থিতি জটিল। হামাস আলোচনায় অনাগ্রহী হয়ে উঠেছে, কাতার ক্ষুব্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে এক বিব্রতকর অবস্থায় আবিষ্কার করেছে।