দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ম্যাজিস্ট্রেটদের নাম-ঠিকানা জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট নম্বর ও মোবাইল নম্বরসহ আরো কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের প্রশ্নবিদ্ধ তিন সংসদ নির্বাচনে কারা নির্বাহী হাকিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, সেই তথ্য সংগ্রহ করছে নির্বাচন কমিশন।
‘জনগণের ভোট ছাড়া’ ওই নির্বাচনগুলো আয়োজনের অভিযোগে বিএনপির দায়ের করা মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এ বিষয়ে তথ্য চেয়েছিল ইসির কাছে।
সেই প্রেক্ষাপটে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ভোটের কাজে থাকা ম্যাজিস্ট্রেটদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার এ উদ্যোগ নিয়েছে ইসি সচিবালয়। তথ্য চেয়ে বুধবার সব জেলার ডিসি এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারকে চিঠি পাঠিয়েছেন ইসির উপসচিব মনির হোসেন।
সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে আচরণ বিধি প্রতিপালন এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ভোট ঘিরে মোটামুটি দেড় হাজারের বেশি নির্বাহী হাকিম নিয়োজিত থাকেন। আর বিচারিক হাকিমও থাকে ইসির চাহিদা মত।
চিঠিতে বলা হয়েছে, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ম্যাজিস্ট্রেটদের নাম-ঠিকানা জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট নম্বর ও মোবাইল নম্বরসহ আরো কিছু তথ্য পাঠাতে হবে।
এর আগে বিগত তিন সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসারদের বিস্তারিত তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে চেয়েছিল পিবিআই।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেছিলেন, পিবিআই এর চাহিদা অনুযায়ী তথ্য সরবরাহের ব্যবস্থা তারা নিচ্ছেন।
দশম থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব ‘পালন না করে’ উল্টো ‘ভয়-ভীতি দেখিয়ে’ জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচন করার অভিযোগে গত ২২ জুন এ মামলা করে বিএনপি।
ওই তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা নির্বাচন কমিশনের সব পদাধিকারীর পাশাপাশি ক্ষমতচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে সেখানে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে সিইসি ছিলেন কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ, ২০১৮ সালে কে এম নূরুল হুদা এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে ছিলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। তাদের মধ্যে নূরুল হুদা ও হাবিবুল আউয়ালকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে।
সে অনুযায়ী ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হয় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়।
এর মধ্যে দশম ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপিসহ বেশিরভাগ বিরোধী রাজনৈতিক দল।
তাদের বর্জনের ফলে দশম নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হয়ে যান। সেই সংসদকে ‘বিনা ভোটের সংসদ’ আখ্যা দেয় ভোট বর্জন করা বিএনপি।
বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর একটি অংশ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিলেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠে। অধিকাংশ ভোট আগের রাতে হয়ে যাওয়ার অভিযোগের মধ্যে বিরোধীরা মাত্র সাতটি আসনে জয় পায়। সে নির্বাচনের নাম হয় ‘নীশিরাতের নির্বাচন’।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখাতে শরিক ও বিরোধীদল জাতীয় পার্টির জন্য আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের সঙ্গে দলের বিদ্রোহীদের। এ নির্বাচনের নাম হয় ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচন।
প্রশ্নবিদ্ধ ওই তিন নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ জয়ী হয় এবং ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে দেশ শাসন করে যায়। শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে।
এরপর ওই তিন নির্বাচনে অনিয়মের জন্য দায়ীদের বিচারের দাবি তোলা হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে। তাতে সাড়া দিয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
অভিযোগগুলো পর্যালোচনার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা বিশ্লেষণ, অনিয়মের দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতে সুষ্ঠু ও মানসম্পন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সুপারিশ প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ওই কমিশনকে।