রংপুরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সমৃদ্ধ ভাস্কর্য ‘অর্জন’ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি মুছে দিয়েছেন জুলাই বিপ্লবীরা। এসময় তারা ভাস্কর্যে থাকা শেখ মুজিবের ছবিতে কালো রঙের কালি লেপে দেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) রাত ১১টার দিকে শহরের মডার্ন মোড়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ভাস্কর্য হিসেবে পরিচিত ‘অর্জন’ চত্বরে কয়েকজন জুলাই বিপ্লবী জড়ো হন।
সেখানে তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে সিটি করপোরেশন থেকে আনা গাড়িতে চড়ে ভাস্কর্যের ওপরে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিটি মুছে দিতে কালো রঙের স্প্রে ব্যবহার করেন।
এ সময় ‘জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে’, ‘ছাত্রলীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এসময় সাংবাদিকদের জুলাই যোদ্ধা সিয়াম আহমেদ আয়ান বলেন, রংপুরবাসী মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী, মুজিববাদে বিশ্বাসী না। পুরো বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয়েছে সে সময় বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর করা হয়েছিল কিন্তু রংপুরের মানুষ শান্তিপ্রিয় কারও বাড়ি ভাঙচুর করে নাই। মুক্তিযুদ্ধে অনেক নেতাই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল কিন্তু সেটা এককভাবে বঙ্গবন্ধু কেন্দ্রিক করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থাকবে শেখ মুজিবের যতটুকু অবদান সেটা তাকে দেওয়া হবে। আমাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য নাই। এ অর্জনে মুক্তিযুদ্ধে যারা অবদান রেখে তাদের ছবি দেখতে চাই শুধু মুজিবের ছবি নয়।
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পাটি এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনা উল্লেখ করে আয়ান আরও বলেন, এনসিপি একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে সভা-সমাবেশ করে। এটা তাদের রাজনৈতিক অধিকার কিন্তু সেখানে সেখানে একটা রাজনৈতিক দল আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে এসব কর্মকাণ্ড একমাত্র সন্ত্রাসীরাই করতে পারে। তাই প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে মুজিবের ছবি কালি দিয়ে মুছে দিয়েছি।
এর আগে ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে সেখানে অর্জন ভাস্কর্যে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের জাতীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি রংপুর জিলা স্কুল মোড়ে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালসহ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে ফেলেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এছাড়াও রংপুর জেলা পরিষদ ও সদর উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন উপজেলায় থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি ভেঙে ফেলা হয়।
অর্জন ভাস্কর্য কালো কালি দিয়ে মুজিবের ছবি মুছে ফেলার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব রহমত আলীকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায় নি।
তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম সরদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমরা ডিউটিতে ভিজি ছিলাম। পরে গিয়ে দেখি তারা কালো কালি ছবিটা মুছে দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলার কোনো অবনতি ঘটেনি।
’অর্জন’ ভাস্কর্যের তত্ত্বাবধান করে থাকেন রংপুর জেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পরিমল কুমার সরকার বলেন, স্যার (জেলা প্রশাসক) ঢাকায় আছেন এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নাই।