রাজশাহীর পবায় গতকাল বুধবার সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহের পাশে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। এতে লেখা আছে, ‘সুদ দিয়ো না, কিস্তি দিয়ো না।’
মৃত চালকের নাম শামসুদ্দিন (৩২), বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার তালন্দ বাজার এলাকার সামাসপুর গ্রামে। তাঁর স্ত্রী শিলা খাতুন জানিয়েছেন, তাঁর (শামসুদ্দিন) অনেক ঋণ আছে; মামলাও হয়েছে। বুধবার মামলার হাজিরার দিন ছিল। হাজিরা না দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় তিনি থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তানোরের তালন্দ বাজারে শামসুদ্দিনের মোটরসাইকেল যন্ত্রাংশের দোকান ছিল। তিনি ঋণ করে একটি মাইক্রোবাস কিনেছিলেন। দুর্ঘটনায় পড়ে মাইক্রোবাসটি ভেঙে যায়। সেই ঋণের টাকা আর পরিশোধ করতে পারেননি। ঋণের কিস্তি শোধ করার জন্য আরেক জায়গায় ঋণ করেন। একপর্যায়ে আরও ঋণ নেন। ক্রমেই তাঁর ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে। ছয় মাস আগে পাওনাদারদের দৃষ্টি এড়াতে তিনি দোকান বিক্রি করে সপরিবার ঢাকায় যান। সেখানে গিয়েও থাকতে পারেননি। ফিরে এসে তাঁরা উপজেলার নওহাটার কাজীপাড়া এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে ওঠেন। স্ত্রী শ্বশুরবাড়িতে থাকেন আর শামসুদ্দিনের নওহাটা কলেজ মোড়ে ছাত্রাবাসে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে সেখানে থাকেন। পাওনাদারদের কাছ থেকে আত্মগোপন করার উদ্দেশ্যেই তিনি ওই ছাত্রাবাসে থাকতেন। ওই ছাত্রাবাসের কক্ষে গতকাল বিকেলে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেন। পরে পবা থানার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দরজা ভেঙে লাশ উদ্ধার করেন।
পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দরজা ভেঙে কক্ষে প্রবেশ করে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেন। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে দুটি বিষের বোতল ও একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ঋণের চাপেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’
এ ঘটনায় শামসুদ্দিনের স্ত্রী শিলা খাতুন বাদী হয়ে পবা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে থানায় শিলা খাতুনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, গতকাল বুধবার ঋণের টাকার মামলার হাজিরার দিন ছিল। দুপুরে যখন বাড়িতে এল তখন হাজিরা ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বামী তাঁকে বলেন তিনি হাজিরা দেননি। উকিলকে টাকা দিয়ে চলে এসেছেন। স্বামীর খাওয়ার জন্য ভাত বেড়ে দেন। পরে তরকারি আনতে যান। এই ফাঁকে তিনি না খেয়ে গাড়ি (অটোরিকশা) নিয়ে বের হন। মেয়ে দুটো দৌড় দিয়ে গিয়ে বাবার গাড়ি চেপে ধরে। তখন তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের ধর, আমি গাড়ি চালাতে যাব।’ তারপর বিকেলে মারা যাওয়ার খবর পেলেন।
মরদেহের পাশে পাওয়া চিরকুট স্বামীর লেখা বলে জানান শিলা খাতুন। তিনি বলেন, তাঁর হস্তাক্ষর স্পষ্ট নয়। একটি মিষ্টির প্যাকেটের উল্টা পাশে তিনি তাঁর বক্তব্য লিখে গেছেন।
ওই চিরকুটের শেষে শামসুদ্দিন লিখেছেন, ‘. . . সবাই ভালো থাকো। বিদায় নিচ্ছি।’ ভেতরে এক জায়গায় লিখেছেন, ‘. . . সুদ দিয়ো না, কিস্তি দিয়ো না।’ সুদের প্রসঙ্গে আরও এক-দুই জায়গায় লেখা আছে। কিন্তু পুরো বাক্য মিল করে পাঠ উদ্ধার করা যাচ্ছে না। চিরকুটের এক পাশে লেখা আছে, ‘আমার বাচ্চাটাকে ভালো থাকতে দিয়ো। পারলে মাফ করে দিয়ো। মা-ভাইকে কিছুই দিতে পারিনি।’