চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সংঘর্ষের ঘটনায় জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম হাটহাজারী উপজেলা আমির সিরাজুল ইসলামকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার প্রচার সেক্রেটারি অধ্যাপক ফজলুল করিমের সই করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জোবরা গ্রাম নিয়ে জামায়াতে ইসলামী হাটহাজারী উপজেলা আমির মো. সিরাজুল ইসলামের অনাকাঙ্ক্ষিত একটি বক্তব্য ‘বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের পৈতৃক সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমরা জমিদার, জমিদারের উপর কেউ হস্তক্ষেপ করবে, এটা আমরা মেনে নেবো না।’ যা জামায়াতে ইসলামীর দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনে করে, এ বক্তব্য সিরাজুল ইসলামের নিজস্ব বক্তব্য যাতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার বিক্ষুব্ধ হয়েছে এবং সংগঠন এ বক্তব্যকে বিনয় পরিপন্থি মনে করে। এতে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমরা এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। এ বক্তব্যের কারণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে হাটহাজারী উপজেলা আমিরের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। ৭ সেপ্টেম্বর (রবিবার) চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আমির মো. আলা উদ্দিন সিকদারের সভাপতিত্বে জরুরি জেলা কর্মপরিষদ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী মনে করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জোবরা গ্রাম কেউ কারও প্রতিপক্ষ নয়, পরস্পরের পরিপূরক। এলাকাবাসী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অতীত ঐতিহ্য ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ বজায় ছিল, ভবিষ্যতেও এ ধরনের সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে– এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। সম্প্রতি অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও জোবরা গ্রামের অধিবাসী যারা আহত হয়েছেন, বাড়িঘর সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, আমরা এ জন্য সমবেদনা জানাচ্ছি। এ ছাড়া এ ঘটনাকে পুঁজি করে কেউ যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত আর কোনও ঘটনা ঘটাতে না পারে এ জন্য প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবার সজাগ দৃষ্টি কামনা করছি।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী জোবরা গ্রামের বাসিন্দাদের উদ্যোগে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী এবং হাটহাজারী জামায়াতের আমির সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের পৈতৃক সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মালিক। আমরা জমিদার, জমিদারের ওপর কেউ হস্তক্ষেপ করবে, এটা আমরা মেনে নেবো না।’
জামায়াত নেতা সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের বুকের ওপর। আমরা এই জায়গার মালিক, তাই অন্যায় কিছু মেনে নেবো না। আমাদের সম্মান করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় যদি আমাদের যথাযথ সম্মান না করে, তবে আমরা জনগণ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
সভার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সভায় জামায়াত নেতার দেওয়া বক্তব্য নিয়ে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এক পর্যায়ে শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর, এ এফ রহমান হল ও শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের সামনে জড়ো হয়ে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা ‘চবি নিয়ে জমিদারি, চলবে না, চলবে না’; ‘চাটুকারের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’; ‘সন্ত্রাসীদের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’; ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।