জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী পুরোদমে নির্বাচনী প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে। দলটি এরই মধ্যে ৩০০ সংসদীয় আসনের প্রায় সব কটিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। আসনভিত্তিক প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচনী মাঠে প্রার্থীদের সক্রিয় হতে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণার জন্য আরো কিছুটা সময় নিতে চায় দলটি।

২০২৪ সালের শেষ ভাগ থেকে দেশব্যাপী কর্মী সম্মেলন, সভা-সমাবেশ ও সাংগঠনিক সফর অব্যাহত রেখেছে জামায়াত। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার পাশাপাশি সর্বসাধারণের কাছে দলের বার্তা পৌঁছে দিতে কাজ করছে দলটি। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান এবং সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এরই মধ্যে বিভিন্ন জেলা সফর করে কর্মী সম্মেলনে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রার্থীও ঘোষণা করেছেন।

পিআর পদ্ধতির (সংখ্যানুপাতিক) নির্বাচনসহ নানা দাবিতে মাঠে সরব জামায়াত। একই সঙ্গে নির্বাচনী মাঠে প্রার্থী প্রচারণায় দলটি অন্য দলগুলোর চেয়ে এগিয়ে।

জামায়াতের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানিয়েছেন, সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রাথমিক যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে, তা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে এই তালিকা থেকে প্রার্থী বাদের সংখ্যাও বেশি হবে না।

মাঠ পর্যায়ের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি, জনমত এবং প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান বিশ্লেষণ করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কাছাকাছি সময়ে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।

একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য জামায়াত তিনটি পথ খোলা রেখেছে। এককভাবে, জোটগতভাবে অথবা সমঝোতার ভিত্তিতে। এই তিন পথ সামনে রেখেই দলটি তাদের নির্বাচনী কৌশল সাজাচ্ছে।

জোটগতভাবে অথবা সমঝোতার অংশ হিসেবে খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোটসহ অন্য ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে।

এর মাধ্যমে শক্তিশালী একটি ইসলামী প্ল্যাটফর্ম গঠন করে ভোটে লড়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর সমঝোতা বা জোট না হলে এককভাবে নির্বাচন করবে দলটি।

দাওয়াতি কার্যক্রমকে নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দেখছে জামায়াত। এর জন্য কোরআন শিক্ষার আসর, সামাজিক সমস্যা নিয়ে আলোচনাসভা, শিক্ষার্থী সংবর্ধনা, বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ, যুবক ও ছাত্রদের নিয়ে ওয়ার্কশপসহ মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

এতে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে দলটির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠছে বলে দাবি করছেন দলীয় নেতারা।

প্রার্থীদেরও নিজ নিজ এলাকায় মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় রাখা হয়েছে। তাঁরা জনসংযোগের পাশাপাশি সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। গত রমজানে ইফতার মাহফিল আয়োজন, ঈদসামগ্রী বিতরণসহ নানা কর্মকাণ্ডে যুক্ত থেকে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছে দলটি। এলাকায় পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট বিতরণ করে দলের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। প্রার্থীরা ভোটও চেয়েছেন।

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, ‘জামায়াতে ইসলামী একটি নির্বাচনমুখী দল। অতীতে সব গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর অংশগ্রহণ ও জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব ছিল। সারা দেশে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী প্রস্তুতি চলছে।’

পিরোজপুর জেলার তিনটি আসনে এরই মধ্যে প্রাথমিক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াত। এর মধ্যে পিরোজপুর-১ আসনে ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছোট ছেলে মাসুদ সাঈদী, পিরোজপুর-২ আসনে সাঈদীর মেজো ছেলে শামীম সাঈদীর প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাঁরা উভয়ে নিজ নিজ আসনে প্রচারণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, প্রার্থী হিসেবে ভোটও চাইছেন।

পটুয়াখালী-২ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে জামায়াতের ঢাকা দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদকে। তিনিও তাঁর নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা, দরিদ্রদের মধ্যে সেলাই মেশিন বিতরণ, রাস্তাঘাট সংস্কারের উদ্যোগ, এলাকার সমস্যা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করছেন। পাশাপাশি এসব কর্মকাণ্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করে নিজের প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে স্থানীয় লোকজনের মাঝে তুলে ধরছেন।

ঢাকা-১৫ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হবেন ডা. শফিকুর রহমান। তিনি এই এলাকায় সভা-সমাবেশ ছাড়াও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে মানুষের মন জয়ের চেষ্টা করছেন।

এ ছাড়া দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার খুলনা-৫ আসনে (ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলা) প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্যদের মধ্যে নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান রাজশাহী-১, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের কুমিল্লা-১১, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জ-৪, মাওলানা হামিদুর রহমান আযাদ কক্সবাজার-২ এবং এহসানুল মাহবুব জুবায়ের সিলেট-১ আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ভোটারদের হৃদয় জয় করতে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা নাগরিক অধিকার, ন্যায়বিচার ও অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। একই সঙ্গে অতীত সরকারগুলোর সময় দল ও নেতাকর্মীদের ওপর চালানো নিপীড়নের বর্ণনা তুলে ধরছেন।