সংখ্যানুপাতিক (পিআর) নির্বাচন ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ইসলামপন্থি দলের রাজপথে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ‘গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরার পর হয়রত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি মনে করি, এটার (কর্মসূচি) কোনো প্রয়োজন ছিলো না। আলোচনা তো শেষ হয়নি এখনো। আলোচনা চলছে, আলোচনা চলা অবস্থায় এই ধরনের কর্মসূচির অর্থই হচ্ছে, এই যে একটা অহেতুক একটা চাপ সৃষ্টি করা।”
“যেটা আমি মনে করি যে, গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয় এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারেও শুভ নয়।”
এদিন জামায়াত, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও ইসলামী আন্দোলন ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।
তাদের পাঁচ দফা দাবি হল- জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয়কক্ষে প্রোপরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন বা পিআর পদ্ধতি চালু করা, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি দল ও প্রার্থীকে লেভেল প্লেইং ফিল্ড (সবার সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা, বিগত ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের সব ‘জুলুম, গণহত্যা ও দুর্নীতির’ বিচার দৃশ্যমান করা এবং ‘স্বৈরাচারের সহায়ক’ হিসাবে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
এসব দাবিতে বিভাগ ও জেলা-উপজেলা পর্যায়েও আরও দুইদিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি রয়েছে তাদের।
রাষ্ট্র সংস্কারের ৮৪ বিষয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদের খসড়া চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশন তৃতীয় দফা আলোচনায় বসেছে। তবে এখন পর্যন্ত দলগুলো সহমতে আসতে পারেনি।
এ অবস্থায় এই ইসলামপন্থি দলগুলো যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামল।
বাংলাদেশ বিমানের নিয়মিত ফ্লাইটে স্ত্রী রাহাত আরাকে নিয়ে সিঙ্গাপুর থেকে সন্ধ্যায় দেশে ফিরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দেন ফখরুল।
এ সময় তিনি বলেন, “বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খুব শিগগিরই লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন।”
‘রাজপথেই কী সমাধান হবে?’
আলোচনার টেবিলে সমাধান হচ্ছে না বলেই জামায়াত রাজপথে নেমেছে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, “এভাবে রাজপথে এলেই সমাধান হয়ে যাবে।
“আমরা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল, এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এই পরিবর্তনের পরে আমরা কিন্তু কোনো ইস্যুতে রাজপথে আসিনি। আমরা আলোচনার মাধ্যমেই সমস্ত কিছু সমাধান করতে চাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস, এটা আলোচনা মাধ্যমে শেষ হবে।”
‘বাংলাদেশে পিআর এর প্রয়োজনীয়তা নেই’
পিআর সম্পর্কে দলের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে ফখরুল বলেন, “আমরা বারবারই বলেছি, পিআর এর ব্যাপারে আমাদের অবস্থান খুব স্পষ্ট। আমরা পিআর এর পক্ষে নই। আমরা মনে করি যে, বাংলাদেশে পিআর এর কোনো প্রয়োজনীয়তা নাই।”
“আর জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা চলছে। অনেকগুলো ইস্যুতে আমরা একমত হয়েছি, সেই বিষয়গুলো নিয়ে সামনে এলেই হয়।”
তিনি বলেন, “এ একটা বিষয় পরিষ্কারভাবে আমি বলতে চাই, এখানে যেটাই করা হোক, সেটাতে জনগণের সমর্থনটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। জনগণের সমর্থন আসে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে পার্লামেন্ট আসবে, সেটাতে। কারণ সংসদই একমাত্র অধিকার রাখে যে সংবিধান পরিবর্তন করতে পারবে, সংবিধান সংশোধন করতে পারবে…সেখানেই সম্ভব।”
‘রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নই’
জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার করে আগেও বলেছি, এখনো বলছি, আমরা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই।”
‘জাতিসংঘের অধিবেশনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে’
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের সফরসঙ্গী হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, “আমি এটা এখনো নিজেই জানি না যে, সেখানে আমাদের ভূমিকাটা কী হবে? কারণ ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সাথে এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এই ব্যাপারে আমার কোনো কথা হয়নি। কথা হলে আজকে হয়ত জানতে পারব।”
“আমরা মনে হয় যে, দেশের গণতন্ত্র উত্তরণের বিষয়টি সেখানে প্রাধান্য পাবে এবং একই সঙ্গে দেশের উন্নয়নের ব্যাপারটা প্রাধান্য পাবে, এটা আর কি?”
‘দেশের বাইরের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন নেই’
দেশের সিদ্ধান্ত প্রায়শই বাইরে হয় দেখছি। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমি মনে করি না। আমাদের সিদ্ধান্ত সমন্বিত প্রচেষ্টায় ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদেরকেই নিতে হবে।
“আমরা সবসময়ই আমাদের বাংলাদেশের যে সিদ্ধান্তগুলো সেগুলো আগেও আমরা দেশে নিয়েছি, এখন আমরা নিজেরা নিজেরাই নেব, এদেশের মানুষেরাই নিয়েছে। আমি মনে করি, বাইরের সিদ্ধান্তের কোনো প্রয়োজন নাই।”
বিমান বন্দরে ফখরুলকে স্বাগত জানান বিএনপি নেতা ফরহাদ হোসেন আজাদ, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খানসহ দলের বিমানবন্দর ও উত্তরা এলাকার নেতাকর্মীদের একটি দল।