পাবনার তাঁতের লুঙ্গির সুনাম বহু যুগের। সোনালি অধ্যায় ছিল ঐতিহ্যবাহী মসলিন কাপড়েরও। তবে এসব সুনাম ও ঐতিহ্য এখন শুধুই বইয়ের পাতায় স্থান পেতে চলেছে। নেই তাঁত বা তাঁতিদের রঙিন সুতোয় বোনা সেই সোনালি গল্প। রং, সুতা ও কাঁচামালের দরবৃদ্ধি এবং এর বিপরীতে তাঁতে বোনা কাপড়ের চাহিদা কমায় নিঃস্ব হয়েছেন তাঁতি বা কারখানা মালিকরা।
গত এক দশকেরও কম সময়ে জেলায় বিলীন হয়েছে দুই-তৃতীয়াংশ তাঁত। পেশা বদলেছে হাজারো মানুষ।
সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের কুড়িপাড়া এলাকা। উপজেলার প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ তাঁত ছিল এখানে। দুই বছর আগেও এ এলাকায় তাঁতের সংখ্যা ছিল ৫ হাজারের মতো। এসব তাঁতের ওপর নির্ভরশীল ছিল প্রায় ২০ হাজার পরিবার। তবে এখন সেদিন নেই। ব্যাপক লোকসানে দু’বছরে তাঁত কমেছে দেড় হাজার। পেশা হারিয়ে বিপাকে ৬ হাজার পরিবার।
তিনি জানান, একদিকে সুতা ও রংসহ কাপড় তৈরির খরচ বৃদ্ধি, অন্যদিকে বাজারে কাপড়ের চাহিদা কম। এতে ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের হিসাবের গরমিলে ২০ লাখ টাকা দেনা হয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন তিনি। পরে দেনা মেটাতে বাধ্য হয়ে সব তাঁত বিক্রি করে ৫০০ টাকা হাজিরায় কাজ করে জীবিকা চালান।
একইরকম অসহায়ত্বের গল্প শোনালেন ওই এলাকার আসাদুজ্জামানের স্ত্রী সুবর্ণা পারভীন আকিবা। তিনি জানান, প্রায় অর্ধশত বছরের পুরোনো তাঁত ব্যবসা তার শ্বশুরকুলের পূর্বপুরুষদের। সবশেষ স্বামী আসাদুজ্জামান হাল ধরেছিলেন ব্যবসার। বড় কারখানায় ৫০টি তাঁতে ২০০ শ্রমিক কাজ করতেন। এলাকায় অত্যন্ত সমৃদ্ধ জীবনযাপন ছিল তাদের। তবে লোকসানে ২ কোটি টাকার ঋণের বোঝা সইতে না পেরে তাঁত বিক্রি করে ব্যাংকলোন পরিশোধ করেন। এখন কোনোমতে জীবন জীবিকা চালাচ্ছেন তারা