কক্সবাজারের চকরিয়ায় ২০ দিন বয়সী শিশু নাতিকে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে আপন নানির বিরুদ্ধে। বিক্রিতে সহায়তা করেছে নানির বোন ও তার ছেলে। এ ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার (২৭ আগস্ট) সকাল ১১টায় উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট ২ নম্বর ওয়ার্ড ডুমখালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) থানায় অভিযোগ করা হলে অভিযুক্ত নানিকে পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে ওইদিন রাতে।
এ ঘটনায় বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) থানার তদন্ত কর্মকর্তা নাসিরের নেতৃত্বে পুলিশ নানিকে সাথে নিয়ে নাতিকে বিক্রয়ে সহায়তাকারীদের আটক ও শিশু উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে।
এদিকে, চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল আনোয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, অভিযানে যাওয়া অফিসার শিশু বিক্রিতে সহায়তাকারী নানির বোনকে আটক করে থানায় আনা হচ্ছে।
তিনি জানান, নানা মাধ্যমে চাপ সৃষ্টির পর শিশু’র ক্রেতারা চট্টগ্রাম থেকে শিশুকে নিয়ে চকরিয়া থানায় আসছে।
জানা গেছে, মা নুরুন্নাহার ও মেয়ে জেসমিন আক্তার দু’জনই ভিক্ষা করে একই ঘরে দিনানিপাত করে। ঘটনার দিন মেয়ে তার সদ্য ভূমিষ্ট নবজাতককে নানীর কাছে রেখে পাশ্ববর্তী দোকানে সাবান ক্রয় করতে যায়। পরক্ষণে এসে দেখে নবজাতকসহ নানীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে, নিজের শিশু সন্তানকে হারিয়ে মা জেসমিন আক্তার পাগলপ্রায়। তিনদিন পর নানী ঘরে ফেরে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এক পর্যায়ে মেয়েকে মারতে উদ্যত হয়।
এ ঘটনায় জেসমিন আক্তার বাদী হয়ে নুরুন্নাহারের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
আটক নুরুন্নাহার জানায়, আমার বোনের ছেলে (ভাগিনা) নবজাতককে আদর করার কথা বলে নাতিকে নিয়ে উধাও হয়ে যায়। পরে জানতে পানি চট্টগ্রামের কর্ণফুলি ব্রিজ এলাকায় ওই নবজাতককে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
নবজাতকের মা জেসমনি আক্তার জানান, স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় আমাকে ভরণপোষণ দেয় না। আমি ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমার দুই বছর তিন মাস বয়সী আরও একটি সন্তান রয়েছে। গত ২০ দিন আগে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আমার একটি কন্যা সন্তান হয়। অভাবের সংসারে দুই সন্তানকে নিয়ে আমার স্বপ্নের কমতি ছিল না। কিন্তু একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা আমার স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে। এ ঘটনায় আমার মা, খালা, খালাতো ভাই (মায়ের বোন ও তার ছেলে) জড়িত রয়েছে। টাকার বিনিময়ে আমার শিশুকে বিক্রি করে দিয়েছে। আমি থানা পুলিশের সহায়তায় আমার শিশুকে উদ্ধার চাই।
অন্য একটি সূত্র জানায়- বিক্রি করা শিশু বর্তমানে চট্টগ্রামে আছে ক্রেতাদের সাথে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, একজন শিশু নানীর কাছেও নিরাপদ নয়। এই ঘটনা তারই প্রমাণ। নবজাতকের মা বাদী হয়ে নানিকে বিবাদী করে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারপূর্বক নবজাতককে উদ্ধার করতে কাজ করছে পুলিশ।
তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত নানি ও অভিযোগকারী মা এ রিপোর্ট লেখার সময় তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাসিরের সাথে রয়েছে। তাদের নিয়ে ডুলাহাজারার ডুমখালী এলাকায় নানির বোনের বাসায় গেছেন তদন্তের জন্য। শিশুকে যেখানেই নিয়ে যাক যে কোন উপায়ে উদ্ধার করা হবে।