যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ উপকূলীয় সাসেক্সের একটি মসজিদে আগুন দিয়েছেন দুর্বৃত্তরা। শনিবার স্থানীয় সময় রাতে ওই মসজিদে আগুন দেওয়া হয় বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তবে মসজিদে অগ্নিসংযোগের এই ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ বলছে, মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে মুসলিম বিদ্বেষমূলক অপরাধ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে।
এক বিবৃতিতে সাসেক্স পুলিশ বলেছে, শনিবার রাত ১০টার কিছু আগে পিসহ্যাভেন শহরের ওই মসজিদে অগ্নিনির্বাপণ কর্মীদের ডাকা হয়। অগ্নিকাণ্ডের কারণে মসজিদ ভবনের প্রধান প্রবেশদ্বার ও বাইরে পার্ক করা একটি গাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মসজিদের ভেতরে দু’জন অবস্থান করলেও কেউ হতাহত হননি।
এর আগে, বৃহস্পতিবার ম্যানচেস্টারের একটি সিনাগগে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। ব্রিটেনে ক্রমবর্ধমান হারে মুসলিম বিদ্বেষ বৃদ্ধির মাঝে মসজিদে হামলার এই ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় অলাভজনক সংস্থা ব্রাইটন অ্যান্ড হোভ মুসলিম ফোরামের চেয়ারম্যান তারিক জং বলেছেন, শনিবার রাতে মসজিদের ভেতরে কয়েকজন অবস্থান করছিলেন। তবে তারা সবাই মসজিদের ভেতর থেকে নিরাপদে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘তারা সৌভাগ্যক্রমে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছেন।’’ তারিক জং বলেন, তিনি ম্যানচেস্টারে উপাসকদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার পর ছুরি হামলায় দু’জনের প্রাণহানি এবং শনিবার মসজিদে সন্দেহজনক অগ্নিসংযোগের ঘটনায় হতবাক।
তিনি বলেন, মানুষ কখনোই এই ভেবে উপাসনালয়ে যায় না যে, তারা আক্রান্ত হতে পারেন। তারা সেখানে প্রায়শ্চিত্ত, ক্ষমা প্রার্থনা, নিজেদের এবং পরিবার ও প্রিয়জনদের জন্য প্রার্থনা করতে যান। সেখানে কেউ তাদের খুন, গুলিবর্ষণ, ছুরিকাঘাত কিংবা আগুন ধরিয়ে দিতে চাইতে পারেন, এমন চিন্তা কখনোই তাদের মনে আসে না।
সিনাগগে হামলার পর ব্রিটিশ পুলিশ ম্যানচেস্টারজুড়ে অতিরিক্ত টহল শুরু করেছে। পাশাপাশি দেশজুড়ে ইহুদি সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন স্থানে পুলিশের উপস্থিতি জোরদার করেছে। রোববার সাসেক্স পুলিশ বলেছে, মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনকে আশ্বস্ত করার জন্য মসজিদে অগ্নিসংযোগের স্থলে পুলিশের উপস্থিতি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আমরা সেটি বুঝতে পারছি, এই ঘটনাটি সমাজে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর এর প্রভাব পড়বে।’’
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামাসের হামলা এবং পরবর্তীতে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের পর থেকে ব্রিটেনে ইহুদি-বিদ্বেষ এবং মুসলিম-বিদ্বেষ উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে।
মুসলিম-বিরোধী বিদ্বেষ ট্র্যাক করা সংস্থা টেল মামার গত ফেব্রুয়ারি মাসের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ সালে ব্রিটেনজুড়ে ৬ হাজারেরও বেশি মুসলিম-বিরোধী ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে; যা এই সংস্থাটির রেকর্ড সংরক্ষণ শুরু করার পর গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস