মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় আরাকান (রাখাইন) রাজ্যে রোহিঙ্গা সম্প্রদায় এক চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। সরাসরি সংঘর্ষ নয়, বরং আরাকান আর্মি (এএ)-র কঠোর নিয়ন্ত্রণ, ক্ষুধা এবং জোরপূর্বক নিপীড়নের কারণে ঐতিহাসিকভাবে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলো ধীরে ধীরে জনশূন্য হয়ে পড়ছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, বর্তমানে আরাকানের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা এএ-র নিয়ন্ত্রণে। সেখানে রোহিঙ্গাদের ওপর আরোপিত নিয়ম-কানুন ও চাঁদাবাজি এতটাই নির্দয় যে অনেক পরিবার বেঁচে থাকার তাগিদে বাধ্য হয়ে গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে।
বুথিদং এলাকার এক রোহিঙ্গা বাসিন্দা বলেন, “আমাদের অধিকাংশই অনাহারে দিন কাটাচ্ছি। মাসে ৫০,০০০ কিয়াত দিতে হয় অস্ত্রধারী পাহারাদারদের, যা আমরা কখনও মেনে নেইনি। টাকা না দিলে শাস্তি দেওয়া হয়। এখন মানুষ খাবারের জন্য ভিক্ষা করছে।”
স্থানীয়রা জানান, ডা ফিউ চাং, ইয়োত ন্যো টাওং ও থা ইয়েত কিন মান নুসহ একাধিক গ্রাম ইতোমধ্যেই সম্পূর্ণভাবে জনশূন্য হয়ে পড়েছে। অথচ এসব এলাকায় কোনো সক্রিয় সংঘর্ষ কিংবা সেনা অভিযান হয়নি।
এক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা পিতা বলেন, “আমাদের গ্রামে একসময় ১০০টি পরিবার ছিল। এখন আছে ৫০টিরও কম। অনাহার, ভয় এবং অবর্ণনীয় নিপীড়নের কারণে মানুষ একে একে এলাকা ছেড়ে যাচ্ছে। এইভাবে চলতে থাকলে আরাকানে কোনো রোহিঙ্গাই আর অবশিষ্ট থাকবে না।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি গণচাপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে ধীরে ধীরে মুছে দেওয়ার একটি নতুন কৌশল হতে পারে। আন্তর্জাতিক মহল এ বিষয়ে নীরব, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো অবিলম্বে এই সংকটে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক তৎপরতা জোরদারের দাবি তুলেছে।