1. admin1@shimantoshohor.com : নিজস্ব প্রতিবেদক: : নিজস্ব প্রতিবেদক:
  2. nrakash261@gmail.com : সীমান্ত শহর ডেস্ক: : NR Akash
  3. admin@shimantoshohor.com : প্রকাশক : সীমান্ত শহর ডেস্ক: Islam
  4. alamcox808@gmail.com : বিশেষ প্রতিবেদক : Badioul Alam বিশেষ প্রতিবেদক

কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সম্মতিসূচক যৌন সম্পর্ক অপরাধ নয়: ভারতীয় আইনজীবী

✍️ প্রতিবেদক: সীমান্ত শহর ডেস্ক:

  • আপডেট সময়ঃ শনিবার, ২ আগস্ট, ২০২৫
  • ২৬ বার পঠিত
১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের মধ্যে সম্মতিসূচক যৌন সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা উচিত নয় বলে মনে করেন ভারতের বিখ্যাত আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং/ তার নিজস্ব এক্স (পূর্বে টুইটার)

কিশোর-কিশোরীদের (১৬-১৮ বছর বয়সী) মধ্যে সম্মতিসূচক যৌন সম্পর্ক কি অপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত? এই প্রশ্ন নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে ভারতজুড়ে। বিশেষ করে বিখ্যাত আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে দেশটির বর্তমান আইনকে চ্যালেঞ্জ করার পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোনা চলছে।

বর্তমান ভারতীয় আইনে যৌন সম্পর্কের জন্য বয়সসীমা ১৮ বছর। তবে জুলাইয়ের শেষ দিকে সুপ্রিম কোর্টে করা একটি আবেদনে জয়সিং যুক্তি দেন, ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের মধ্যে সম্মতিসূচক যৌন সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা অনুচিত, কারণ এটি নির্যাতন নয় বরং বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক ঘনিষ্ঠতা।

তিনি আদালতে লিখিত দাখিলে বলেন, বয়সভিত্তিক আইনগুলোর উদ্দেশ্য হলো শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া, কিন্তু তা যেন তাদের সম্মতিসূচক সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত না করে।

কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার তার এই যুক্তির বিরোধিতা করেছে। সরকারের বক্তব্য, এই বয়সসীমার মধ্যে সম্মতিসূচক সম্পর্ককে ছাড় দেওয়ার ফলে শিশুদের (১৮ বছরের কম বয়সীদের) নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে এবং তা শিশু পাচার ও বাল্যবিয়ের মতো অপরাধের প্রবণতা বাড়াতে পারে।

এই মামলাটি পকসো আইন নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অনেক শিশু অধিকারকর্মী বলছেন, ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের মধ্যে সম্মতিসূচক যৌন সম্পর্ককে অপরাধের আওতার বাইরে রাখলে কিশোরদের ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষা পাবে। তবে অন্যদিকে, সমালোচকরা সতর্ক করছেন- এই ছাড় শিশু পাচার ও বাল্যবিয়ের মতো অপরাধকে উসকে দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বয়সের কিশোরদের হয়তো এখনো আত্মরক্ষার মতো আইনি প্রস্তুতি বা উপলব্ধি নেই। আর প্রশ্ন উঠছে- যৌন সম্মতির বয়স ঠিক করবে কে? এবং সেই আইন আসলে কাদের স্বার্থ রক্ষা করছে?

বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশ এবং যুক্তরাজ্য ও কানাডায় যৌন সম্মতির বয়স ১৬ বছর হলেও ভারতে তা ১৮ বছর। ভারতের ফৌজদারি বিধি ১৮৬০ সালে যখন প্রণয়ন করা হয়, তখন যৌন সম্মতির বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। পরে ১৯৪০ সালে তা বাড়িয়ে ১৬ করা হয়।

২০১২ সালে পকসো আইন কার্যকর হলে সম্মতির বয়স বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ বছর। ২০১৩ সালে ফৌজদারি আইন সংশোধন করে সেই বয়সসীমা অনুসরণ করা হয় এবং ২০২৪ সালে প্রণীত নতুন ফৌজদারি বিধিতেও এই বয়সসীমাই বহাল রাখা হয়েছে।

তবে গত এক দশকে অনেক শিশু অধিকারকর্মী ও কিছু আদালত এই বয়সসীমা নিয়ে সমালোচনা করেছেন। তারা বলছেন, এই আইন কিশোর-কিশোরীদের স্বাভাবিক সম্পর্ককে অপরাধ বানিয়ে ফেলে ও অনেক সময় অভিভাবকেরা তাদের মেয়েদের ‘সম্পর্ক’ বন্ধ করতে এই আইনের অপব্যবহার করেন।

ভারতের মতো দেশে যেখানে এখনো যৌনতা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা নিষিদ্ধের মতো, সেখানে বহু টিনএজার যে যৌন সম্পর্কে জড়ায়, তা বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত।

শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা ‘মুস্কান’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা শর্মিলা রাজে বলেন, আমাদের সমাজে জাত, শ্রেণি ও ধর্মভিত্তিক বিভাজন রয়েছে, যেটি এই সম্মতির আইনকে আরও বেশি অপব্যবহারের দিকে ঠেলে দেয়।

২০২২ সালে কর্ণাটক হাই কোর্ট পকসো আইনের অধীনে যৌন সম্মতির বয়স পুনর্বিবেচনার জন্য ভারতের আইন কমিশনকে নির্দেশ দেয়। আদালত কয়েকটি মামলার উল্লেখ করে বলেছিল, যেখানে ১৬ বছরের বেশি বয়সী মেয়েরা প্রেম করে পালিয়ে যায়, পরে তাদের প্রেমিকদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও অপহরণের মামলা দায়ের করা হয়।

পরের বছর আইন কমিশন জানায়, তারা সম্মতির বয়স কমানোর পক্ষে নয়, তবে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে ‘নীরব সম্মতি’ থাকলে সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিচারকের স্বাধীনতা রাখা যেতে পারে।

তবে আইনজীবী ও শিশু অধিকারকর্মী ভবন রিভু এই ধরনের সাধারণ ছাড় দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, এটি অপহরণ, পাচার ও বাল্যবিয়ের মতো অপরাধে অপব্যবহৃত হতে পারে। তিনি এর বদলে বিচার ব্যবস্থা সংস্কার ও দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।

রিভু বলেন, আমাদের এমন একটি ব্যবস্থার দরকার, যেখানে দ্রুত সময়ে মামলা নিষ্পত্তি হবে এবং ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হবে।

তবে শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা হকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এনাক্ষী গাঙ্গুলী ইন্দিরা জয়সিংয়ের পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, আইনের অপব্যবহারের ভয়ে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন থেকে পেছাতে পারি না।

গাঙ্গুলী মনে করেন, ইন্দিরা জয়সিংয়ের যুক্তি নতুন নয়। এর আগেও বহু কর্মী ও বিশেষজ্ঞ একই পরামর্শ দিয়েছেন। তার ভাষায়, সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আইনকেও বদলাতে হবে। তা না হলে আইন অকার্যকর হয়ে পড়বে।

পোষ্টটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
© 2025 Shimanto Shohor
Site Customized By NewsTech.Com