গাজার চলমান যুদ্ধবিরতি আলোচনায় এখন যার নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত, তিনি হলেন হামাসের শীর্ষ নেতা খালিল আল-হাইয়া। সম্প্রতি কাতারে ইসরায়েলের হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া এই অভিজ্ঞ নেতা এবার প্রকাশ্যে আসছেন। সোমবার মিসরের শারম এল-শেখে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় অংশ নিবেন তিনি।
৬৪ বছর বয়সী আল-হাইয়া হামাসের কেন্দ্রীয় আলোচক হিসেবে পরিচিত। গাজার যুদ্ধ শুরুর পর থেকে তিনি যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর ইসরায়েল যে ব্যাপক পাল্টা অভিযান শুরু করে, তাতে গাজার অধিকাংশ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এই সময় থেকেই আল-হাইয়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছেন যুদ্ধ থামানোর লক্ষ্যে।
আল-হাইয়ার জন্ম গাজা উপত্যকায়। ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডে যোগ দেন, যে সংগঠন থেকেই পরে হামাসের জন্ম। ১৯৮৭ সালে হামাস প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি সংগঠনের প্রথম সারির নেতাদের একজন হিসেবে উঠে আসেন। ইসরায়েলি বাহিনী একাধিকবার তাকে গ্রেপ্তার করেছিল।
তার পারিবারিক জীবনও গাজা সংঘাতের নির্মমতার প্রতীক। ২০০৭ সালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজা সিটির শেজায়িয়া এলাকায় তার বাড়িতে হামলা চালানো হলে একাধিক পরিবারের সদস্য নিহত হন। ২০০৮ সালে তার পুত্র হামজা, আর ২০১৪ সালের যুদ্ধে বড় ছেলে ওসামা, ওসামার স্ত্রী ও তিন সন্তান নিহত হন। চলমান সংঘাতে আরও এক পুত্রের মৃত্যু হয়েছে।
এই ভয়াবহ ব্যক্তিগত ক্ষতির পরও আল-হাইয়া হামাসের নেতৃত্বে স্থিতিশীল ভূমিকা রাখছেন। ইসরায়েলের একাধিক বিমান হামলায় হামাসের শীর্ষ নেতারা নিহত হওয়ার পর- যেমন ইরানে নিহত ইসমাইল হানিয়া ও গাজায় নিহত ইয়াহিয়া সিনওয়ার আল-হাইয়া এখন সংগঠনের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।
তিনি বর্তমানে কাতারে অবস্থান করছেন, যেখানে হামাসের নির্বাসিত নেতৃত্বের পাঁচ সদস্যের পরিষদ পরিচালিত হয়। ইরানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যায়, যা হামাসের অস্ত্র ও অর্থের অন্যতম উৎস। ২০১৪ সালের গাজা যুদ্ধের সময়ও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায়।
ইসরায়েলের সেপ্টেম্বরের হামলায় যখন কাতারে হামাসের বৈঠক লক্ষ্যবস্তু করা হয়, তখন আল-হাইয়া অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। ওই হামলায় ছয়জন নিহত হলেও কোনো শীর্ষ নেতা মারা যাননি। এখন সেই হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে এসে তিনিই নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে ট্রাম্পের ২০ দফা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা বিষয়ক আলোচনায়।
বিশ্লেষকদের মতে, খালিল আল-হাইয়া এখন শুধু হামাস নয়, পুরো ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের অন্যতম মুখ। গাজার ভবিষ্যৎ ও মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে তার ভূমিকা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।