অক্টোবরের মধ্যে অধিকাংশ সংসদীয় আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে সবুজ সংকেতও দেওয়া হবে। সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে আসনভিত্তিক প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ার বিষয়ে আলোচনায় নেতারা বলেন, বাছাই প্রক্রিয়া চলছে। খুব শিগগির দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্য থেকে অধিকাংশ আসনে একক প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হবে। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠকে নেতারা বলেন, প্রতি আসনে একাধিক, কোনো কোনো আসনে ১৫ থেকে ২০ জন পর্যন্ত প্রার্থী রয়েছেন। সেখান থেকে সর্বাপেক্ষা পরিচ্ছন্ন, জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং তরুণ প্রার্থী বাছাইয়ে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে দেশের জেন-জি প্রজন্ম হিসেবে পরিচিত প্রায় চার কোটি ভোটারের মনোভাব কাজে লাগাতে, তাদের সমর্থন আদায়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ কারণে এবার অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা বাদ পড়তে পারেন। তবে দলে যাতে কোন্দল সৃষ্টি না হয়, সেদিকে কড়া নজরের বিষয়ে একমত পোষণ করেন নেতারা। স্থায়ী কমিটির এক নেতা জানান, মনোনয়ন প্রক্রিয়াটি তারেক রহমান নিজেই দেখভাল করছেন। ইতোমধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটি তাঁর ওপর এই দায়িত্ব দিয়েছে।
আলোচিত জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তির জন্য আগামী সংসদ নির্বাচনের দিনে একই সঙ্গে গণভোট নেওয়ার প্রস্তাবকে বিএনপির স্থায়ী কমিটি সমর্থন জানিয়েছে। স্থায়ী কমিটি মনে করে, গণভোটের ‘হ্যাঁ-না’ ফলের ভিত্তিতে নির্বাচিত পরবর্তী সংসদ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে এবং তা বাস্তবায়ন করবে। রাজনৈতিক ঐকমত্য হওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলোর ভিত্তিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বিএনপির অঙ্গীকার।
সূত্র বলছে, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সর্বশেষ বৈঠকের আলোচনার সারাংশ স্থায়ী কমিটিকে জানান। এর পর স্থায়ী কমিটিতে সেটি নিয়ে, বিশেষ করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট নেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। স্থায়ী কমিটির অভিমত, গণভোটের জন্য এখন আর সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন নেই। রেফারেন্ডামের (গণভোট) যে আর্টিকেল ১৪২, আওয়ামী সরকার সেটা উড়িয়ে দিয়েছিল, যেটা হাইকোর্টের রায়ের মধ্য দিয়ে প্রতিস্থাপন হয়েছে।
তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জামায়াতে ইসলামী জাতীয় নির্বাচনের আগে আলাদাভাবে গণভোটের আয়োজন চায়। জানা গেছে, বিষয়টি নিয়েও স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। স্থায়ী কমিটি মনে করে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের সম্মতি নিতে আলাদাভাবে গণভোট আয়োজনের অসুবিধা রয়েছে। সেটি হলো, আরেকটি সংসদ নির্বাচনের মতো বিশাল আয়োজনের জন্য দেশকে প্রস্তুত করতে হবে। নির্বাচন বিলম্বিত করা এর একটি উদ্দেশ্য হতে পারে।
সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিপক্ষ বিএনপির বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে নানা মিথ্যাচার ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি বাড়ানো এবং ফ্যাক্ট চেকের মাধ্যমে সত্যকে তুলে ধরার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন তারা।
আগামী নির্বাচনে সব আসনে একাধিক প্রার্থী থাকায় একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হলে যাতে অন্যরা ক্ষুব্ধ না হন, নিষ্ক্রিয় না হন, সেদিকে নজর দেবে বিএনপি। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা বলেন, ১৭ বছরে যেভাবে দলের মধ্যে ঐক্য অটুট রাখা হয়েছে, তার চেয়েও বেশি ঐক্যের বন্ধন না হলে বিপর্যয় আসতে পারে। সেজন্য সবাইকে একযোগে নির্বাচনী মাঠে নামানোর কৌশল নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গত এক বছরের বেশি সময় যাদের বিরুদ্ধে নানা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা নির্দোষ প্রমাণিত তাদের দলে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন নেতারা।