1. admin1@shimantoshohor.com : নিজস্ব প্রতিবেদক: : নিজস্ব প্রতিবেদক:
  2. nrakash261@gmail.com : সীমান্ত শহর ডেস্ক: : NR Akash
  3. admin@shimantoshohor.com : প্রকাশক : সীমান্ত শহর ডেস্ক: Islam
  4. alamcox808@gmail.com : বিশেষ প্রতিবেদক : Badioul Alam বিশেষ প্রতিবেদক

নবি সালেহ (আ.) ও সামুদ জাতির কাহিনি

✍️ প্রতিবেদক: সীমান্ত শহর ডেস্ক:

  • আপডেট সময়ঃ বুধবার, ৬ আগস্ট, ২০২৫
  • ৩৭ বার পঠিত
মাদায়েনে সালেহে সামুদ জাতির কিছু বাড়িঘর এখনও টিকে আছে। ছবি: সংগৃহীত

সালেহ (আ.) ছিলেন আল্লাহর একজন নবি যিনি আরব গোত্র সামুদের কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন। তিনি তাদেরকে আল্লাহ তাআলার একত্ববাদে বিশ্বাস এবং তাঁর ইবাদতের দাওয়াত দিয়েছিলেন।

সামুদ জাতি বসবাস করত হিজাজ ও তাবুক অঞ্চলের মধ্যবর্তী পাহাড়ি এলাকায়। তারা মূর্তিপূজা ও বিভিন্ন রকম পাপাচারে অভ্যস্ত ছিল। সালেহ (আ.) তাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াত দেন, মূর্তিপূজা পরিত্যাগ করতে বলেন, পাপাচার পরিত্যাগ করতে বলেন। কিন্তু তারা নবি সালেহের (আ.) দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে।

সালেহ (আ.) তাদেরকে বার বার তাগিদ দিয়ে বলেন যেন তারা সেই রবের ইবাদত করে, যিনি তাদের সৃষ্টি করেছেন, রিজিক দান করেন এবং যিনি তাদেরকে আদ জাতির পরে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি বানিয়েছেন। তিনি তাদের ওপর আল্লাহর বিভিন্ন রকম নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।

কিন্তু সামুদ জাতির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাসহ বেশিরভাগ মানুষ সালেহকে (আ.) মিথ্যাবাদী বলে আখ্যায়িত করে এবং তাকে পাগল ও জাদুকর বলে। সালেহ (আ.) তাদের বলেন, তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত একজন রাসুল। তিনি তো তাদের কাছে কোনো বিনিময় বা প্রতিদান চান না। সামুদ জাতি ইসলাম গ্রহণ করলে তার ব্যক্তিগত কোনো লাভ নেই। তাই তিনি কেন মিথ্যা বলবেন?

নবি সালেহ (আ.) ও সামুদ জাতির কাহিনীছবি: উইকিপিডিয়া

নবি সালেহের (আ.) মুজিজা

সামুদ জাতি সালেহের (আ.) নবুয়্যতের প্রমাণ হিসেবে মুজিজা বা অলৌকিক কোনো ঘটনা দেখাতে বলে। সালেহ (আ.) তাদের জিজ্ঞাসা করেন, তারা কী ধরনের মুজিজা চায়? সামুদ জাতির অবিশ্বাসীরা একটি বৃহৎ পাথর দেখিয়ে বলে, তিনি যেন এই পাথর থেকে একটি উষ্ট্রী বের করে আনেন। তারা উষ্ট্রীর শারীরিক গঠনের ব্যাপারে এমন কিছু শর্তও আরোপ করে যা সাধারণ উষ্ট্রীর থাকে না। সালেহ (আ.) আল্লাহর কাছে দোয়া করেন যেন সেই পাথর থেকে তাদের শর্ত অনুযায়ী উষ্ট্রী বের হয়ে আসে।

আল্লাহর তাআলার ইচ্ছায় সেই পাথর থেকে একটি উষ্ট্রী বের হয়ে আসে, ঠিক যেমন তারা চেয়েছিল এবং তাদের চোখের সামনেই তা ঘটে। তারা বিস্ময়ে অভিভূত হয়। তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক ব্যক্তি সালেহের (আ.) ওপর ইমান আনে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ সুস্পষ্ট মুজিজা দেখার পরও কুফরিতে অটল থাকে।

সালেহ (আ.) সামুদ জাতিকে বলেন, এই উষ্ট্রী আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নিদর্শন হিসেবে এসেছে তোমাদের দাবি অনুযায়ী, এটা আল্লাহর উষ্ট্রী, তাই তোমরা যেন এই উষ্ট্রীকে কষ্ট না দাও। এই উষ্ট্রীকে কোনোভাবে কষ্ট দিলে আল্লাহ তাআলার শাস্তি নেমে আসবে।

উষ্ট্রীটি প্রচুর পানি খেতো। সালেহ (আ.) নিয়ম করে দেন, সামুদের এলাকার কূপ থেকে একদিন এই উষ্ট্রী পানি গ্রহণ করবে, অন্যদিন সামুদ জাতির অন্যান্যরা নিজেদের প্রয়োজনীয় পানি গ্রহণ করবে।

নবি সালেহ (আ.) ও সামুদ জাতির কাহিনিছবি: সংগৃহীত

উষ্ট্রী হত্যা ও সামুদ জাতির ধ্বংস

কিছুদিনের মধ্যে সামুদ জাতির অবিশ্বাসীরা অলৌকিক উষ্ট্রীর ওপর বিরক্ত হয়ে যায়। উষ্ট্রীটি তাদের পানি ও পশুখাদ্যে ভাগ বসাচ্ছে এটা তাদের অসহ্য বোধ হয়। তারা উষ্ট্রীটিকে মেরে ফেলার ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা শুরু করে।

সামুদের অনেকেই এটাকে একটা বিপদজনক কাজ বলে সাবধান করে। কিন্তু কিছু মানুষ উষ্ট্রীটিকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্তে অটল থাকে। একদিন সুযোগ বুঝে তারা অলৌকিক উষ্ট্রীকে মেরে পেলে, তার বাচ্চাকেও মেরে ফেলে।

এই সংবাদ নবি সালেহের (আ.) কাছে পৌঁছলে তিনি বলেন, তাদের জন্য আল্লাহ তাআলার শাস্তি অবধারিত হয়ে গেছে। তিন দিনের মধ্যে তাদের ওপর আল্লাহর কঠিন শাস্তি নেমে আসবে।

সামুদের অবিশ্বাসীরা নবি সালেহের (আ.) এই সাবধানবাণী অবিশ্বাস করে এবং এটা নিয়ে উপহাস করে। তারা সালেহকেও (আ.) হত্যার ষড়যন্ত্র করে। আল্লাহ তাআলা তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেন।

নবি সালেহের (আ.) সাবধানবাণী অনুযায়ী সামুদ জাতির অবিশ্বাসীদের ওপর আল্লাহ তাআলার শাস্তির লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। প্রথম দিনে তাদের চেহারা উজ্জ্বল হয়ে যায়, দ্বিতীয় দিনে তা লালচে হয়ে ওঠে, আর তৃতীয় দিন শনিবার তাদের মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায়। রোববার সকালে আকাশ থেকে প্রচণ্ড এক গর্জন ভেসে আসে সাথে সাথে ভূমিকম্পও হয় এবং সামুদ জাতির অবিশ্বাসীরা মারা যায়।

নবি সালেহ (আ.) ও সামুদ জাতির কাহিনিছবি: সংগৃহীত

কোরআনের বর্ণনায় সামুদ জাতি অবাধ্যতা ও শাস্তি

কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা সামুদ জাতির কথা বর্ণনা করেছেন। তাদের পরিণতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে বলেছেন।

সুরা আ’রাফে আল্লাহ তাআলা বলেন, সামুদ জাতির কাছে আমি প্রেরণ করেছিলাম তাদের ভাই সালেহকে। সে বলল, হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন উপাস্য নেই। তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে প্রমাণ এসে গেছে। এটি আল্লাহর উষ্ট্রী, তোমাদের জন্য নিদর্শন স্বরূপ। তোমরা একে ছেড়ে দাও আল্লাহর জমিনে চরে বেড়াবে। তোমরা একে অন্যায়ভাবে স্পর্শ করবে না; তাতে মর্মান্তিক শাস্তি তোমাদের পাকড়াও করবে।

তোমরা স্মরণ কর, আদ জাতির পরে তিনি তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন আর তোমাদেরকে জমিনে বসতি দান করেছেন, তোমরা তার সমতলে প্রাসাদ নির্মাণ করছো আর পাহাড় কেটে ঘর তৈরি করছো, কাজেই আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ করো, পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করো না।

তার জাতির দাম্ভিক নেতৃবৃন্দ দুর্বল মুমিনদের বললো, তোমরা কি মনে করো যে সালেহ তার রবের পক্ষ থেকে প্রেরিত? তারা বললো, নিশ্চয় সে যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছে, আমরা তাতে বিশ্বাসী। জবাবে দাম্ভিক নেতারা বলল, নিশ্চয় তোমরা যে বিষয়ে ইমান এনেছ, আমরা ওই বিষয়গুলো অস্বীকার করি।

তারপর তারা উষ্ট্রীটিকে মেরে ফেলল এবং তাদের রবের স্পষ্ট বিরোধিতা করে চলল আর বলল, হে সালেহ! তুমি যদি রসুল হয়েই থাক তাহলে তা নিয়ে এসো আমাদেরকে যার ভয় দেখাচ্ছ।

ফলে তাদেরকে ভূমিকম্প পাকড়াও করলো, এক সকালে তারা তাদের ঘরে মরে উপুড় হয়ে পড়ে রইলো। আর সালেহ এ কথা বলে তাদেরকে পরিত্যাগ করলো যে, হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের কাছে আমার রবের বাণী পৌঁছে দিয়েছি, তোমাদের সদুপদেশ দিয়েছি কিন্তু সদুপদেশ দানকারীদেরকে তোমরা পছন্দ কর না। (সুরা আ’রাফ: ৭৩-৭৯)

পোষ্টটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
© 2025 Shimanto Shohor
Site Customized By NewsTech.Com